QR কোড হচ্ছে বহুল প্রচলিত বারকোডের একটি দ্বিমাত্রিক এবং আপগ্রেডেড রুপ। বার-কোড জিনিসটি আমরা সবাই কম বেশি দেখেছি। যে কোন প্রোডাক্টের গায়ে বা বইয়ের পিছনের মলাটে সাদার মধ্য কালো ডোরাকাটা বেশ কিছুটা লম্বা লাইন থাকে, সেটিই বার-কোড। বারকোড ব্যবহার করা হয় মূলত কোন প্রোডাক্টের আইডেন্টি নাম্বার প্রকাশ করার জন্য।
সংক্ষিপ্ত যে কোন তথ্যকে দ্রুত ও সহজভাবে যন্ত্রের কাছে পঠন যোগ্য করার জন্য এই ধরণের কোডগুলো ব্যবহার করা হয়। অপটিক্যাল মার্ক রিকগনিশন (OMR) প্রযুক্তি অপটিক্যাল ক্যারেকটার রিকগনিশন (OCR) প্রযুক্তির তুলনায় দ্রুত, কম ব্যায়বহুল এবং নির্ভুল হওয়ায়, কম তথ্য যন্ত্রের নিকট তুলে ধরার জন্য খুবই উপযুক্ত।
কিউআর কোড, (কুইক রেসপন্স কোড থেকে সংক্ষিপ্ত) হলো সর্বপ্রথম জাপানে স্বয়ংচালিত শিল্পের জন্য পরিকল্পিত ম্যাট্রিক্স বারকোড (বা দ্বিমাত্রিক বারকোড) ধরনের একটি ট্রেডমার্ক। বারকোড হল মেশিনে পাঠযোগ্য অপটিক্যাল লেবেল যা এতে সংযুক্ত উপাত্ত সম্পর্কে তথ্য ধারণ করে থাকে। একটি কিউআর কোড দক্ষতার সাথে তথ্য ধারণ করার জন্য চারটি মানদন্ডে (নিউমেরিক, আলফানিউমেরিক, বাইট/বাইনারি, এবং কাঞ্জি) এনকোডিং মোড ব্যবহার করে, যেখানে এক্সটেনশন ব্যবহার করা যেতে পারে।
বার-কোড বা কিউ আর কোড জাতীয় কোডে ঠিক এই কাজটিই করা হয়। যে কোন ক্যারেক্টারে লেখা কোন তথ্যকে উপস্থাপন করা হয় মেশিন রিডেবল কিছু মার্কের মাধ্যমে।
কিউআর কোডের কিছু উল্লেখযোগ্য ব্যবহারক্ষেত্র হলো
পণ্যের মোড়কজাতকরণে: আপনি যেকোনো পণ্যের চূড়ান্ত প্যাকেজিংয়ের ওপর এই কিউআর কোড ব্যবহার করতে পারেন। এতে একটি পণ্যের ব্যাখ্যা, কার্যকারিতা, ব্যবহার নির্দেশিকা, গ্রাহকসেবার যোগাযোগের নম্বর এবং কোম্পানিসংক্রান্ত সাধারণ তথ্য সংযুক্ত করতে পারেন।
ব্যবসায়িক কার্ড এবং বিজ্ঞাপন উপকরণ
আপনি আপনার ব্যবসায়িক কার্ড এবং বিজ্ঞাপন উপকরণের ওপর এই কিউআর কোড মুদ্রণ করতে পারেন। এর ফলে স্মার্টফোনের মাধ্যমে স্ক্যান করে যে কেউ আপনার ব্যবসার বিস্তারিত বিবরণসহ ওয়েব পেজটিও দেখতে পারবেন।
বর্তমানে QR কোডের অসংখ্য ব্যাবহার রয়েছে। কিউ আর কোডের মাধ্যমে যেকোনো ইউআরএল, ওয়াই-ফাই পাসওয়ার্ড বা যেকোনো রকমের টেক্স শেয়ার করতে পারেন। আমাদের দেশে কিউ-আর কোডের ব্যবহার কিছুদিন আগে খুব বেশি ছিলো না বললেই চলে। এখন এটি বেশ দেখতে পাওয়া যায়। পেমেন্ট সিস্টেম বিশেষ করে মোবাইল ব্যাংকিং সিস্টেম বিকাশের অ্যাপ আসার পরে এটির ব্যবহার বলা গেলে লক্ষণীয়ভাবে ছড়িয়ে পড়েছে!
তবে শুধু মাত্র লেনদেন বা ব্যবসায়িক কাজেই নয়, আপনি চাইলেই বিভিন্ন ক্ষেত্রে এর ব্যবহার করতে পারেন। যেমন-
ফোন বুক শেয়ারিং।
বিজনেজ কার্ড শেয়ারিং।
ওয়াইফাই শেয়ারিং।
ওয়েব সাইটের ঠিকানা আদান প্রদান।
যে কোন ধরণের লিংক শেয়ারিং।
পেমেন্ট সিস্টেম।
এ রকম সব ক্ষেত্র ছাড়াও আরও হাজার রকম কাজে ব্যবহার করা যায় কিউ আর কোড। আপনার প্রয়োজন অনুযায়ী ১০০০ ক্যারেক্টারের মধ্য লেখা যে কোন তথ্যকে প্রকাশ করতে পারেন কিউ আর কোডের মাধ্যমে। যেটি ক্যামেরা আছে এ রকম যে কোন ডিভাইসের কাছে হবে দ্রুত পঠনযোগ্য।
আজ আমি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি কিভাবে অ্যান্ড্রয়েড ফোনে সহজে ও বিনামূল্যে QR কোড স্ক্যান করবেন।
Google Lens এর মাধ্যমে
প্রায় প্রতিটি অ্যান্ড্রয়েড ফোনেই গুগল অ্যাপগুলো প্রি-ইনস্টল করা থাকে, QR কোড স্ক্যান করার জন্য থার্ড পার্টি কোনো Apps এর দরকার পড়ে না । Google Lens অ্যাপে অন্তর্নির্মিত স্ক্যানিং স্টিস্টেম আছে। Google Lens এর ম্যাধ্যমে কিউআর এবং বার কোড স্ক্যান করতে পারেন ।
আপনার ফোনের ক্যামেরার মাধ্যমে
বর্তমানের বেশিরভাগ ফোনের ক্যামেরা দিয়ে QR কোড স্ক্যান করা সম্ভব। বর্তমানে শাওমী ও স্যামসাং ও পিক্সেল ফোনের স্টক ক্যামেরা দিয়েই স্ক্যান করতে পারবেন । এছাড়া অ্যান্ড্রয়েড ওয়ান ফোন গুলোতেও এ ফিচারটি রয়েছে। অন্যন্য ব্রান্ডের ফোনগুলোতেও হয়তো সম্ভব, আপনার ফোনের ক্যামেরা সেটিংস এ গিয়ে দেখতে পারেন ।
এই ওয়েব অ্যাপটি ব্যাবহারের মাধ্যমে
প্লে স্টোরে এমন হাজার হাজার অ্যাপ রয়েছে যার মাধ্যমে QR কোড স্ক্যান করতে পারেন। তবে বেশিরভাগ অ্যাপই বিজ্ঞাপন, অতিরিক্ত ফিচারসহ নানা ট্রাকিং স্ক্যাম স্টিস্টেম রয়েছে। এজন্য এসব অ্যাপের পরিবর্তে একটি ওপেন-সোর্স ওয়েব অ্যাপ্লিকেশনটির পরামর্শ দিচ্ছি, যেটি qrcodescan.in এ ভিজিট করে অ্যাক্সেস করতে পারবেন। qrcodescan.in ভিজিট করে আপনার ফোনের ক্যামেরা পারমিশন দিন এবং এটি QR কোড স্ক্যান করতে প্রস্তুত। অ্যাপটি কোনও কোড সনাক্ত করার সাথে সাথে একটি পপ-আপে আপনাকে সেটি দেখাবে। এছাড়া আপনি এই Apps এ আগে স্ক্যান করা কোডগুলো দেখতে পারবেন তার জন্য নীচের ডানদিকে কোণে ভাসমান ক্যামেরা বোতামটিতে চাপ দিতে হবে।
ইমেজ ক্রেডিটঃ AndroidPolice